
প্রকাশিত: Sun, Feb 26, 2023 10:40 AM আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 2:53 PM
হঠাৎ কী হলো শ্রদ্ধেয় শুভাপ্রসন্নর?
লুৎফর রহমান রিটন: পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন-পানি এবং দাওয়াত শব্দ দুটিকে বাংলা ভাষা থেকে খারিজ করে দিতে আগ্রহী। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় আমার জানা নেই। কিন্তু তাঁর মতো একজন বর্ষীয়ান প্রখ্যাত একজন শিল্পীর মুখে এরকম বাণী উচ্চারিত হয়েছে জেনে খানিকটা বিস্মিত আমি। আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে উদ্ধৃত করছি, ‘বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা দেখছি বহু কারণে, নানান সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে’। এর পরেই শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ আজকে বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনও দিন বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না। আমরা কোনও দিন কখনও দাওয়াত দিই না। সুতরাং ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা। আমরা জানি, অন্য একাধিক ভাষা থেকে শব্দ আহরণ করে বাংলা ভাষা নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে। সংস্কৃত-আরবি-ফার্সি-ইংরেজি থেকে বহু শব্দ নিজের ভাণ্ডারে নিয়ে এসেছে বাংলা ভাষা।
বাংলা ভাষার রূপ ও সৌন্দর্য তাতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলা ভাষার চিত্রকল্প ও চিত্রনাট্য আরও বর্ণিল-বর্ণাঢ্য হয়েছে। জনাব শুভাপ্রসন্ন নিশ্চয়ই জানেন ‘পানি’ কিংবা ‘দাওয়াত’ কোনো ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে না। গেলো একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর বক্তৃতায় শব্দ দুটি ‘বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়েছে’ বলে ইশারা ইংগিতে শব্দ দুটির ঘাড়ে ধর্মের ভূতকে চাপিয়ে দিয়েছেন। বাংলা ভাষার একজন লেখক হিশেবে আমি এর নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের সতেরো কোটি বাঙালি যে বাংলা ভাষায় কথা বলে সেই ভাষায় জল-পানি-দাওয়াত-নিমন্ত্রণ শব্দ দুটি সমান মর্যাদায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে সুদীর্ঘকাল ধরে। বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদেরই অর্জন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটির নেপথ্যেও আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির কীর্তিগাঁথা দৃশ্যমান। আব্বাসউদ্দিনের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘আল্লা মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই আল্লা মেঘ দে’ গানটা আমি গাই প্রাণ ভরে। আবার ‘মা তোর বদন খানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি’ গাইতেও আমার কোনো সমস্যা হয় না। পানি আর জল আমার যাপিত জীবনেরই অনুষঙ্গ, প্রাত্যহিক। এই আমি একক নই।
এই আমি সমষ্টিরই প্রতিনিধি। জল আর পানি নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা অতীতেও হয়েছে। শুভাপ্রসন্নের মতো মানুষেরা ভবিষ্যতেও করবেন। এই নিয়ে আশির দশকে একটা ছড়া লিখেছিলাম ‘ঠোকাঠুকি’ নামে। বাংলাদেশের সেনাশাসক স্বৈরাচারী এরশাদ আশির দশকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দীর্ঘকাল অধিষ্ঠিত থাকার বাসনায় এক জনসভায় দাঁড়িয়ে তার বক্তৃতায় ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছে (তখনও বাবরি মসজিদ অক্ষত) এরকম ভুয়া খবর রাষ্ট্র করে দিয়ে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিলো। মুহূর্তে সারা দেশে মন্দিরে মন্দিরে এমনকি হিন্দুমালিকদের মিষ্টির দোকানেও সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত হামলা শুরু হয়েছিলো। তখন লিখেছিলাম ছড়াটা-ঠোকাঠুকি। লুৎফর রহমান রিটন। দৃশ্যটা মোটামুটি পরিচিত বটে, পানি থাকে কলসিতে, জল থাকে ঘটে। কলসি ও ঘটে লেগে গেলো ঠোকাঠুকি, ফুটো হয়ে গেলো দু’টো, দিলো ওরা উঁকি-জল বলে পানি- তোমার অপর নাম জীবন তা জানি। পানি বলে জল-তুমি এই বিশ্বকে করো নির্মল।
জল পানি মিলেমিশে হলো একাকার। সপ্ত সাগর তেরো নদী হয়ে গেলো পার। [২] জনপ্রিয় ইংরেজি ওয়েব সিরিজ ওয়াকিং ডেড-এ দেখা যায় একটি শহরের সমস্ত মানুষ ইনফেক্টেড হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দলে দলে। কথা বলতে না পারা জন্তুর মতো ক্ষ্যাও ক্ষিয়াও করা এই মানুষগুলো আসলে মৃত। মৃত এই মানুষগুলো বিচিত্র কারণে জিন্দা হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করছে দলে দলে-সুস্থ মানুষের খোঁজে। এবং তারা অদ্ভুত এক ভাইরাসে আক্রান্ত। সুস্থ মানুষ পেলেই তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কামড়ে দিচ্ছে। আর একবার যদি সুস্থ কোনো মানুষকে কামড়ে দিতে পারে ওদের কেউ একজন, তাহলে সুস্থ সেই মানুষটাও ওদের মতো ইনফেক্টেড হয়ে পড়ে। বর্ষীয়ান চিত্রকর শুভাপ্রসন্নকে হঠাৎ কে কামড়ে দিলো। ইনফেক্টেড হয়ে তিনি এখন কামড় বসিয়েছেন ‘পানি’ এবং ‘দাওয়াত’-এর মতো বাংলা ভাষার নিরিহ দু’টি শব্দের ওপর। অটোয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। লেখক: ছড়াকার
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
